MGNREGA West Bengal 2025: রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম ভরসার জায়গা — ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পরে অবশেষে আগামী ১ আগস্ট থেকে ফের চালু হতে চলেছে এই কর্মসূচি, যা নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে লক্ষ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারের কাছে। বিশেষত, কৃষিকাজে ছেদ পড়া, খরা অথবা বন্যার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের জন্য এটি যেন স্বস্তির হাওয়া। এই প্রকল্প চালু হলে শুধুমাত্র রোজগারের সুযোগই নয়, গ্রামীণ পরিকাঠামোর উন্নয়নেও গতি আসবে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক এই প্রকল্প পুনরায় চালুর পেছনের কারণ, উপকারিতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।

১০০ দিনের কাজ প্রকল্প কী?
১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের সরকারিভাবে নাম “মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা আইন” (MGNREGA)। এর মূল লক্ষ্য হল গ্রামীণ অঞ্চলের বাসিন্দাদের হাতে কাজের সুযোগ তুলে দেওয়া।
প্রতিটি পরিবার বছরে ১০০ দিনের শ্রমিকের কাজ পাওয়ার অধিকার রাখে। প্রকল্পের আওতায় থাকে রাস্তা নির্মাণ, পুকুর খনন, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি গ্রামীণ উন্নয়নমূলক কাজ।
কেন বন্ধ ছিল এই প্রকল্প?
গত কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রীয় অনুদান বন্ধ থাকায় রাজ্যে কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এই প্রকল্প। কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছিল, প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় অর্থসাহায্য স্থগিত রাখা হয়েছে।
তবে রাজ্য সরকার একাধিকবার জানায়, প্রকল্প সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং তদারকিও বাড়ানো হয়েছে। পরবর্তীতে কেন্দ্র-রাজ্য আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ফের অর্থ ছাড় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
১ আগস্ট থেকে চালু হচ্ছে প্রকল্প
রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে আবারও রাজ্য জুড়ে শুরু হবে ১০০ দিনের কাজ। ইতিমধ্যে জেলার প্রশাসনিক স্তরে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে যাতে প্রস্তুতি শুরু করা যায়। এবার প্রকল্পে আরও বেশি স্বচ্ছতা ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজের অগ্রগতি ট্র্যাক করা হবে।
কী কী পরিবর্তন আসছে নতুন ব্যবস্থায়?
নতুন করে চালু হওয়া প্রকল্পে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে:
- ডিজিটাল হাজিরা: শ্রমিকদের উপস্থিতি ডিজিটালি রেকর্ড করা হবে যাতে অনিয়ম রোধ করা যায়।
- প্রজেক্ট মনিটরিং অ্যাপ: প্রতিটি প্রকল্প পর্যবেক্ষণে থাকবে একটি নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপ।
- আধার-সংযুক্ত ব্যাঙ্ক পেমেন্ট: সরাসরি শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা যাবে।
- নারীদের জন্য অগ্রাধিকার: মহিলা শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য পৃথক প্রকল্প বরাদ্দ করা হয়েছে।
উপকার পাবেন কোন শ্রেণির মানুষরা?
- যাঁরা কৃষিকাজের বাইরেও অতিরিক্ত আয়ের রাস্তা খুঁজছেন।
- দরিদ্র, প্রান্তিক পরিবার, যাঁদের কাছে নিয়মিত রোজগারের সুযোগ নেই।
- মহিলারা, যাঁরা স্বনির্ভর হতে চান।
- যুব সম্প্রদায়, যারা গ্রামে থেকেই কাজ করতে চান।
রাজ্য সরকারের ভূমিকা ও প্রস্তুতি
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত স্তরে বৈঠক শুরু করেছে। গ্রামে গ্রামে তালিকা তৈরি করে আগ্রহী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করা হচ্ছে। প্রকল্প চালুর প্রথম মাসেই প্রায় ২০ লক্ষ পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হল ২০২৫ সালের মধ্যেই প্রকল্পের আওতায় অন্তত ১ কোটি পরিবারকে কাজের সুযোগ দেওয়া। একইসঙ্গে প্রকল্পের গুণগত মান এবং দ্রুত পেমেন্ট নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হবে।
১ আগস্ট থেকে রাজ্যে ফের শুরু হওয়া ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প কেবলমাত্র একটি কর্মসূচি নয়, এটি একটি সামাজিক নিরাপত্তা বলয়। এটির মাধ্যমে রাজ্যের গ্রামীণ জনগণ অর্থনৈতিক স্বস্তি ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে। শুধু রাজ্য নয়, গোটা দেশের ক্ষেত্রেই এটি একটি প্রমাণ যে সঠিক ইচ্ছা ও কার্যকর ব্যবস্থাপনায় সরকারি প্রকল্পও সমাজে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।