প্রতি বছর ১ লাখ জমালেই ১৫ বছরে ৩১ লাখ! জানুন পুরো হিসাব! | New Investment 2025

New Investment 2025: জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আর্থিক নিরাপত্তার কথা ভাবলে, অনেকেই নিরাপদ বিনিয়োগ খোঁজেন। সেই ক্ষেত্রে Public Provident Fund বা PPF হলো এক অনন্য, ঝুঁকিমুক্ত এবং সরকার দ্বারা সমর্থিত বিনিয়োগ মাধ্যম, যা দীর্ঘমেয়াদে ভালো রিটার্ন দেয়। বর্তমানে ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিট কিংবা অন্য কোন ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের তুলনায় PPF এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি, কারণ এটি শুধু নিরাপদ নয়, বরং এর উপর আয় কর ছাড়ের সুবিধাও মেলে। আজ আমরা বিশ্লেষণ করে দেখবো – আপনি যদি প্রতি বছর ১ লক্ষ টাকা করে ১৫ বছর ধরে PPF-এ বিনিয়োগ করেন, তাহলে কত টাকা পাবেন।

New Investment 2025

Public Provident Fund (PPF) একটি দীর্ঘমেয়াদি ছোট সঞ্চয় প্রকল্প, যা মূলত ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তৈরি হয়েছে। এটি মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী একটি প্রকল্প। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী প্রতি বছর ন্যূনতম ₹৫০০ এবং সর্বোচ্চ ₹১.৫ লক্ষ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন। বর্তমানে সরকার নির্ধারিত PPF-র সুদের হার প্রতি বছর ৭.১ শতাংশ, যা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পর্যালোচনা করা হয়।

ধরা যাক, আপনি প্রতি বছর ₹১ লক্ষ করে জমা রাখছেন। এই পরিমাণ যদি আপনি ১৫ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে জমা রাখেন, তাহলে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ₹১৫ লক্ষ। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। যেহেতু PPF-এ সুদ চক্রবৃদ্ধি হারে সংযুক্ত হয়, তাই প্রতি বছরের সুদও মূলধনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পরবর্তী বছর আরও বেশি রিটার্ন তৈরি করে। এইভাবে চলতে থাকলে, ১৫ বছর পরে আপনি পাবেন একটি চমকপ্রদ অঙ্ক।

বর্তমানে ৭.১% সুদের হার অনুযায়ী, আপনি যদি ১৫ বছর ধরে প্রতি বছর ₹১ লক্ষ করে বিনিয়োগ করেন, তাহলে আপনার ম্যাচুরিটি অ্যামাউন্ট দাঁড়াবে প্রায় ₹৩১,১৭,০০০ টাকার কাছাকাছি। এর মধ্যে প্রায় ₹১৬,১৭,০০০ টাকার মতো আপনি সুদ হিসেবে পাবেন, যা আপনার আসল বিনিয়োগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

এই রিটার্ন আপনি পাবেন সম্পূর্ণ ট্যাক্স ফ্রি। অর্থাৎ, আপনার লাভের উপর কোনো আয়কর দিতে হবে না। এই কর সুবিধা একে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। সাধারণত বহু বিনিয়োগ মাধ্যম আছে যেগুলোতে সুদের উপর কর দিতে হয়, কিন্তু PPF-এ আপনি এই ঝামেলা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকেন। ধারা ৮০সি অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে সর্বোচ্চ ₹১.৫ লক্ষ পর্যন্ত বিনিয়োগে আয় কর ছাড় পাওয়া যায়। ফলে যারা বছরে ১ লক্ষ টাকা করে বিনিয়োগ করছেন, তারা এই ছাড়ের পুরো সুবিধাই পাচ্ছেন।

এছাড়া, এটি এমন একটি প্রকল্প যার উপর বাজারের ওঠাপড়ার কোনো প্রভাব পড়ে না। অর্থাৎ শেয়ারবাজারে ধস নামলেও বা অন্য আর্থিক অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও, PPF-এ আপনার টাকা সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে এবং পূর্বনির্ধারিত হারে সুদ পাবেন। সরকারের গ্যারান্টি থাকায় এটি একেবারে ঝুঁকিমুক্ত।

PPF-এ বিনিয়োগের আরেকটি সুবিধা হলো, এটি একজন মানুষকে নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে। যেহেতু এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প এবং মাঝপথে পুরো টাকা তুলে নেওয়া যায় না (কিছু নির্দিষ্ট শর্তে আংশিক টাকা তোলা গেলেও), তাই এটি বাধ্য করে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ বজায় রাখতে।

তবে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, ১৫ বছর পর কী হবে? আপনার এই টাকা আপনি একসাথে তুলে নিতে পারবেন অথবা চাইলে আপনি এই প্রকল্পটি আরও ৫ বছর করে একাধিকবার বাড়াতে পারবেন, তাও আবার সুদ পাওয়ার সুযোগ সহ। তাই যাঁরা অবসর পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জন্য এটি একেবারে আদর্শ।

একটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, আপনি যদি মাসের ১ তারিখ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে বিনিয়োগ করেন, তাহলে সেই মাসের পুরো টাকার উপর সুদ গণনা হয়। কিন্তু যদি ৫ তারিখের পরে জমা করেন, তবে সেই মাসে সুদের সুযোগ নাও পেতে পারেন। তাই কৌশলগতভাবে সঠিক সময়ে বিনিয়োগ করাও গুরুত্বপূর্ণ।

আজকের দিনে যেখানে ব্যাংকের সেভিংস অ্যাকাউন্টে ৩ থেকে ৪ শতাংশের বেশি সুদ পাওয়া যায় না এবং ফিক্সড ডিপোজিটে সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৭ শতাংশ, সেখানে PPF-এর ৭.১ শতাংশ রিটার্ন যথেষ্ট লাভজনক। তাছাড়া, অনেকেই বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ড, SIP-এর দিকে ঝুঁকেছেন, যেগুলোর উপর বাজারের ঝুঁকি থেকে যায় এবং করও প্রযোজ্য হয়। সেই তুলনায় PPF অনেকটাই স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য।

এখন প্রশ্ন আসে—আপনার জন্য এটি উপযুক্ত কিনা? যদি আপনি ঝুঁকি নিতে না চান, দীর্ঘমেয়াদী এবং নিশ্চিত আয়ের একটি মাধ্যম খুঁজে থাকেন এবং একসাথে কর বাঁচাতে চান, তাহলে অবশ্যই PPF আপনার জন্য উপযুক্ত বিকল্প। এটি একজন চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী এমনকি গৃহিণীর জন্যও সমানভাবে উপযোগী।

সবচেয়ে বড় কথা, যাঁরা ভবিষ্যতে সন্তানদের পড়াশোনা, মেয়ের বিয়ে, বা নিজের অবসর জীবন নিয়ে নিরাপত্তা খুঁজছেন, তাঁদের জন্য PPF হতে পারে সেই নিরাপদ আশ্রয়।

সুতরাং, আপনি যদি ভবিষ্যতের জন্য নিশ্চিত রিটার্ন সহ একটি নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম খুঁজে থাকেন, তবে এখনই একটি PPF অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতি বছর নির্দিষ্ট একটি অঙ্ক জমা রাখার অভ্যাস শুরু করুন। আর সময় মতো সঠিক প্ল্যানিং করলেই আপনি পাবেন একটি বড় অঙ্কের সম্পূর্ণ করমুক্ত সঞ্চয়, যা আপনাকে নিশ্চিতভাবে আর্থিক স্বাধীনতা এনে দেবে।


নতুন নতুন আরো খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a comment