ডিএ নিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান, সুপ্রিম কোর্ট দিল কার্যকর নির্দেশ | WB DA Biggest Updates 2025

WB DA Biggest Updates 2025: পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য সম্প্রতি এসেছে বড়ো এক স্বস্তির সংবাদ। কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কর্মীরা যে মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন, এবার তা খানিকটা হলেও কমবে। দীর্ঘদিন ধরেই ছুটি সংক্রান্ত নানা বিধিনিষেধ ও মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) বকেয়া নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও এবার সেই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছুটি সংক্রান্ত জারি করা কড়াকড়ি প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং ডিএ বকেয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মঞ্জুরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই পদক্ষেপ কর্মীদের পেশাগত মনোবল যেমন বাড়াবে, তেমনি প্রশাসনের প্রতি তাদের আস্থাও দৃঢ় করবে।

WB DA Biggest Updates 2025

গত মে মাসে রাজ্য সরকারের তরফে একটি নির্দেশিকায় জানানো হয়েছিল, রাজ্যের সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের ছুটি কার্যত বন্ধ থাকবে। এই নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছিল, কোনও সরকারি কর্মী শুধুমাত্র জরুরি স্বাস্থ্যগত কারণেই ছুটির আবেদন করতে পারবেন এবং সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রধানের অনুমোদন নিতে হবে। এর ফলে রাজ্যের হাজার হাজার কর্মী এক অদ্ভুত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছিলেন। তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল এই ভেবে যে, প্রশাসন কি এবার কর্মীদের ওপর অনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে?

তবে অবশেষে রাজ্য সরকারের তরফে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ছুটির উপর থাকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে ৪ জুন, ২০২৫ থেকে। অনেক কর্মী ও সরকারি কর্মী সংগঠন এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। কর্মচারী সংগঠনগুলোর তরফে আগেই বলা হয়েছিল যে, এই ধরনের একতরফা ছুটি নিষেধাজ্ঞা শুধুই প্রশাসনিক কঠোরতা নয়, এটি একধরনের দমনমূলক আচরণ। এবার সরকার সেই অবস্থান থেকে সরে এসে বাস্তব পরিস্থিতির দিকে নজর দিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এই ছুটি নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপট ছিল বেশ সংবেদনশীল। রাজ্যের কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরেই বকেয়া ডিএ নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। বহুবার কর্মবিরতি, কর্মসূচি, ধর্মঘট পালিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। সর্বশেষে, ১৬ মে, ২০২৫ তারিখে দেশের সর্বোচ্চ আদালত রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, কর্মচারীদের মোট বকেয়া ডিএ-এর অন্তত ২৫ শতাংশ ছয় সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

এই নির্দেশের ফলে রাজ্য সরকারের উপর বিশাল আর্থিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ₹১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই বকেয়া মেটাতে হবে। যদিও রাজ্য সরকারের তরফে আদালতে জানানো হয়েছিল যে, তারা আর্থিক দিক থেকে এই মুহূর্তে সংকটে রয়েছে এবং এত বড় অঙ্কের অর্থ একসাথে দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু আদালত সেই যুক্তি মেনে নেয়নি। বরং পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, কর্মচারীরা ন্যায্য পাওনা দাবি করছেন এবং তা দিতে সরকার বাধ্য।

ডিএ বকেয়া এবং ছুটির নিষেধাজ্ঞা দুটি বিষয়ই সরকারি কর্মীদের কাছে সংবেদনশীল। কর্মচারীরা শুধু বেতন নয়, কর্মক্ষেত্রে মানসিক নিরাপত্তা এবং মর্যাদাও আশা করেন। তাদের কাজের চাপ, মানসিক চাপ, পারিবারিক দায়িত্ব—সব কিছুর ভারসাম্য বজায় রাখতে ছুটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি অধিকার। সেই অধিকার হঠাৎ করে কেড়ে নেওয়া অনেকেই মেনে নিতে পারেননি।

এছাড়াও, ছুটি নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক সরকারি কর্মী তাদের পূর্ব নির্ধারিত চিকিৎসা, পারিবারিক দায়িত্ব বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ছুটি নিতে পারেননি। এমনকি অনেক কর্মীকে অফিসে নিয়মিত উপস্থিত না থাকার অভিযোগে মানসিকভাবে হেনস্থারও শিকার হতে হয়েছে। এই পরিস্থিতি রাজ্যের প্রশাসনিক পরিসরে একটি অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল। সরকার পরিস্থিতি বুঝে এবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে, যা এক ইতিবাচক পদক্ষেপ।

অন্যদিকে, ডিএ পরিশোধ নিয়ে কর্মীদের মধ্যে নতুন করে আশার আলো দেখা দিয়েছে। যদিও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পুরো অর্থ একসাথে পরিশোধ না করলেও ধাপে ধাপে সেই অর্থ কর্মীদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার। এটি কেবল অর্থনৈতিক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং প্রশাসনিক দায়িত্ববোধের প্রতিফলনও বটে। সরকারি কর্মীরা মনে করছেন, দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফলে এই সাফল্য এসেছে এবং তারা আরও সংগঠিত হয়ে ভবিষ্যতেও কর্মীদের স্বার্থে লড়াই করবেন।

এছাড়াও, এই ঘটনাগুলি রাজ্য সরকার ও কর্মীদের মধ্যে সম্পর্কের জটিলতাকেও সামনে এনেছে। প্রশাসনের একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রবণতা এবং কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা না করে নির্দেশ জারির সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে এবার সরকার যে কর্মীদের দাবি মেনে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেছে, তা এক ধরণের প্রশাসনিক নমনীয়তার উদাহরণ বলেই ধরা যায়।

সব মিলিয়ে বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের জন্য এটি একটি আশার সময়। একদিকে ছুটির অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে বহু প্রতীক্ষিত ডিএ বকেয়া পরিশোধে অগ্রগতি হয়েছে। প্রশাসন ও কর্মীদের মধ্যে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করেই রাজ্য পরিচালনা সম্ভব, এই বার্তাই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে। এখন শুধু অপেক্ষা, এই ইতিবাচক ধারা কতটা ধরে রাখা যায় এবং ভবিষ্যতে আর কোনও দমনমূলক পদক্ষেপ না নেওয়ার প্রতিশ্রুতি কতটা কার্যকরভাবে পালন করা হয়।

সমস্ত চাকরির খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a comment